রং ঢং
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:৫২:১৩ রাত
নিজেদের আঠারো তম বিবাহ বার্ষিকী কিভাবে উদযাপন করবে, ভেবে ভেবে দিশেহারা শিহাব।কাল 'থার্টি ফার্স্ট'। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। আজ ঘন্টা দুই বাকি থাকতেই বাসায় চলে এলো। মিলিকে বেশ 'সারপ্রাইজ' দেয়া যাবে। নিজের ফ্ল্যাটে উঠার সময় সিঁড়ি দরোজায় একটু থামে। ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি ঝুলে থাকে। মনের ভিতরেও কেমন এক প্রফুল্লতা! আজকাল এই বাজারে কোটি টাকা দিয়েও কি একে কেনা যায়? তারপর ও কিভাবে যেন ও গুলি বিরাজ করে।
মিলিকে যখন বলে,
' এবারে চলো 'ম্যারিজ ডে'টা 'থার্টি ফার্স্টে' সবার সাথেই মিলে 'সেলিব্রেট' করি!'
মিলি শিহাবকে দেখে। ওর কাকচক্ষু জলের দৃষ্টিতে বিষাদের ছায়া দেখতে পায় শিহাব। আরো কি কি যেন রয়েছে। অবোধ্য কিছু অনুভবের মাঝে দাঁড়িয়ে শিহাব মিলির উত্তরের প্রতীক্ষায়। হাল্কা পাতা ঝরার শব্দের সাথে একটু উষ্ণ কিছু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শিহাবের কাছে এমনই মনে হয়।
মিলি কি দীর্ঘশ্বাস গোপন করার চেষ্টা করলো। নি:শ্বাস দূরত্ব দুজনের মাঝে। মিলির কথাগুলো যেন দূর নক্ষত্রের বুকের গভীর থেকে ভেসে এলো,
- আমার এতো রং লাগে নাই মনে। ঢং করার সময় ও নাই। কিছুই করা লাগবে না। তোমার অফিস আছে না?
ধাক্কা খায় শিহাব। ভিতরে বাহিরে। মনের গভীরে যে মন থাকে, সেখানেও। নিজের সব থেকে কাছের মানুষের কাছ থেকে, নিজেদের বিশেষ এই দিনটি নিয়ে- এমন নিঃস্পৃহ জবাব আশা করে নাই সে। একটু ব্যথিত হয়। মিলিও শিহাবের মিইয়ে যাওয়া চেহারা দেখে। ভিতরে বাহিরে সে ও ভাংতে থাকে। অবশ্য এই আঠারো বছরে অনেক কিছু নিয়ে ভেংগে ভেংগে যদি মনটার অবশিষ্ট কিছু এখনো থেকে থাকে।
নিজের রুমে কাপড় পাল্টানোর সময় শিহাব মিলির এই ব্যবহার নিয়ে ভাবে। বেশী কি দেরী হয়ে গেছে? আঠারো বছর তো কম দীর্ঘ নয়। কতটা দীর্ঘ? এতোটা দূরত্ব হবার মত কি?
নিজের প্রিয় নারীর রহস্যময়তার অবগুন্ঠন অন্য সময়ে চোখে ধরা না পড়লেও, আজ স্ফটিক স্বচ্ছ হয়ে শিহাবের চোখে ধরা দেয়। পিছনের সময় ওর সামনে দৃশ্যমান হয়। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত শিহাব... একা মিলি দিনের পর দিন, রাতের বুকে দীর্ঘ রাত, নি:সংগ ভোরে শিশিরের উপর মিলির একার পদচিহ্ন... হাত ধরার ইচ্ছে হলেও মিলির ধরবার মত একমাত্র হাতওয়ালা মানুষটি তখন নিজের হাত নিয়ে তখন বড্ড ব্যস্ত!
তবে মিলি একা ছিল সময়ের প্রয়োজনে। আজ যখন সেই প্রয়োজন মিটিয়ে শিহাব একটু সুস্থির- কর্পোরেট জীবন থেকে সময় বের করার মত যোগ্যতার অধিকারী- ধরবার মত হাত দুটি কেন যেন বড্ড নিস্পৃহ!
অনেক দেরী হয়ে গেলো.. জীবনের রং ঢং কি নির্দিষ্ট সময়কে ঘিরে করতে হয়?
জানা নেই শিহাবের।
অনেক দেরি হয়ে গেছে একজন শিহাবের.. একজন মিলির কাছে আসতে। কিন্তু একেবারেই কি শেষ হয়ে গেছে? জীবন তো এখনো আছে। আর যতক্ষন জীবন- ততোক্ষণ রং ঢং করার সুযোগ।
মরে গেলে করবার মতো কি থাকে আর?
পায়ে পায়ে মিলির কাছে আগায় শিহাব। নারীর হৃদয়! যতই ভাংগুক, আবার জোড়া লাগেই। ভালোবাসার প্রলেপ সকল দাগ মুছে ফেলে। শিহাবের এই জিনিসটার কোনো কমতি নাই।
ভালোবাসায় কানায় কানায় পুর্ণ এক পলাতক হৃদয়, রং ঢং করার জন্য ওর অভিমানী হৃদয়ের বড্ড কাছে চলে আসে...
বিষয়: সাহিত্য
৯৫২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুভরাত্রি।
চরম বাস্তব কথা।
ধন্যবাদ অনেক অনেক
ভালো থাকুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন